জ্বালানি খাতের দুর্নীতিবাজদের তালিকা প্রকাশ করুন: আনু মুহাম্মদ

ডিবেট ফর ডেমোক্রেসি আয়োজিত ছায়া সংসদের প্রধান অতিথি অধ্যাপক আনু মুহাম্মদের (বাঁয়ে) সঙ্গে বিজয়ী বিতার্কিক দলের সদস্যরা। পাশে আয়োজক সংগঠনের চেয়ারম্যান হাসান আহমেদ চৌধুরী। ঢাকা, ২৪ মেছবি: আয়োজকদের সৌজন্যে

জ্বালানি খাতের দুর্নীতিবাজদের তালিকা প্রকাশ করতে সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন গণতান্ত্রিক অধিকার কমিটির সদস্য অর্থনীতিবিদ অধ্যাপক আনু মুহাম্মদ। তিনি বলেছেন, বিভিন্ন সরকারের সময়েই দুর্নীতি হয়েছে। তবে দুর্নীতির সব রেকর্ড ভঙ্গ হয়েছে বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের ১৫ বছরে। এটা দেখে আগের দুর্নীতিবাজেরা আফসোস করতে পারেন যে তাঁরা তো কিছুই করতে পারেননি। আর দুর্নীতির সবচেয়ে বড় ক্ষেত্র ছিল বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাত। এ খাতে দুর্নীতি ও লুণ্ঠনের সঙ্গে যাঁরা জড়িত, তাঁদের বেশির ভাগই দেশ থেকে পালিয়ে গেলেন। এর তদন্ত হওয়া দরকার।

বিগত শাসনামলে জ্বালানি খাতে লুণ্ঠনের দায় নিয়ে আয়োজিত ছায়া সংসদে প্রধান অতিথির বক্তব্যে অধ্যাপক আনু মুহাম্মদ এ কথাগুলো বলেন। আজ শনিবার রাজধানীর এফডিসিতে এ অনুষ্ঠানের আয়োজন করে ডিবেট ফর ডেমোক্রেসি।

জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে উপকূলের পরিস্থিতি নাজুক উল্লেখ করে আনু মুহাম্মদ বলেন, উপকূলীয় এলাকায় প্রকল্প করে আরও ঝুঁকি তৈরি করেছে বিগত সরকার। তাদের আমলে তৈরি হওয়া রামপাল বিদ্যুৎকেন্দ্রটি ভারতের আধিপত্যের প্রতীক। বর্তমান সরকারের উচিত এ প্রকল্পটি বন্ধের পথ বের করা। তাতে সাময়িক যে আর্থিক ক্ষতি হবে, তা বিগত সরকারের জ্বালানি খাতের দুর্নীতিবাজদের সম্পদ বাজেয়াপ্ত করে ক্ষতিপূরণ আদায় করতে হবে।

গণতান্ত্রিক অধিকার কমিটির সদস্য আনু মুহাম্মদ বলেন, গণতান্ত্রিক রূপান্তর ও বৈষম্যহীন বাংলাদেশের প্রত্যাশা তৈরি করেছে গণ–অভ্যুত্থান। কিন্তু অন্তর্বর্তী সরকার জ্বালানি খাতের দায়মুক্তি আইন বাতিল করেছে। তবে এ আইনের অধীনে বিগত সরকারের নেওয়া সব প্রকল্পের বৈধতা দিয়েছে। এতে প্রত্যাশা ধাক্কা খেয়েছে। রামপাল, মাতারবাড়ী ও রূপপুর বিদ্যুৎকেন্দ্র তৈরি করে অর্থনীতিতে বোঝা তৈরি করে গেছে বিগত সরকার। সেই বোঝা দূর করায় অন্তর্বর্তী সরকারের কোনো উদ্যোগ নেই। আদানির (ভারতীয় প্রতিষ্ঠান) সঙ্গে বিদ্যুৎ চুক্তিটিও জাতীয় স্বার্থবিরোধী। এসব চুক্তি বাতিলের পথ খুঁজতে হবে।

অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন ডিবেট ফর ডেমোক্রেসির চেয়ারম্যান হাসান আহমেদ চৌধুরী। তিনি বলেন, বিগত শাসনামলে অর্থনৈতিক বিনিময় ছাড়া কোনো বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপিত হয়নি। কিছু রাজনীতিবিদ, আমলা ও ব্যবসায়ী—এই তিন পক্ষের যোগসাজশেই জ্বালানি ও বিদ্যুৎ খাতে দুর্নীতির মাধ্যমে ব্যাপক লুটপাট হয়েছে। সাবেক প্রধানমন্ত্রীর একক পৃষ্ঠপোষকতায় বাংলাদেশের জ্বালানি খাতে হরিলুটের ঘটনা ঘটেছে। বিলিয়ন বিলিয়ন ডলার পাচার করেছে জ্বালানি খাতের মাফিয়ারা।

ডিবেট ফর ডেমোক্রেসির আয়োজনে ‘সঠিক পরিকল্পনার অভাবই জ্বালানি খাতে লুণ্ঠনের প্রধান কারণ’ শীর্ষক ছায়া সংসদে বাংলাদেশ টেক্সটাইল বিশ্ববিদ্যালয় বিতার্কিকদের পরাজিত করে ঢাকা ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির বিতার্কিকেরা বিজয়ী হন। প্রতিযোগিতায় বিচারক ছিলেন অধ্যাপক আবু মুহাম্মদ রইস, সাংবাদিক মাঈনুল আলম, অধ্যাপক তাজুল ইসলাম চৌধুরী, সাংবাদিক রিশান নসরুল্লাহ ও মো. মহিউদ্দিন। প্রতিযোগিতা শেষে অংশগ্রহণকারী দলকে ট্রফি, ক্রেস্ট ও সনদ প্রদান করা হয়।